skip to Main Content

ডিম পেড়েছে হাতি

আবদুল্লাহ-আল-মাসুম

এক.পত্রিকাতে ডিমের খবর
পত্রিকাতে ডিমের খবর
ডিম পেড়েছে হাতি-
এই ঘটনা নিয়ে এখন
চলছে মাতামাতি।
এই জগতে এটা ভীষণ
আজব রকম ব্যাপার-
তাই ছবি ও সবিস্তারে
ছাপালো তা পেপার।
পত্রিকাতে হাতি ও ডিম
চারকালারে আসছে-
‘কান্ড দ্যাখো’-বলেই লোকে
হেঃ হেঃ করে হাসছে।
এই দেখো না! পত্রিকাতে
আজ লিখেছে এই-
‘এমন নজির পৃথিবীতে
দ্বিতীয়টি নেই।
পৃথিবীতে কতো আজব
ঘটনা যায় ঘটে-
অবশ্য যা ঘটে থাকে
তার চে’ বেশী রটে।
কিন্তু এটা রটনা নয়
আজব রকম সত্য,
যদি কেউ মিথ্যে ভাবেন
এমন ডিমের তথ্য-
তাদের প্রতি বলছি এবার
মিথ্যে যারা ভাবেন-
চিড়িয়াখানায় গেলে ডিম ও
হাতির দেখা পাবেন।
ডিম দু’টা ও ডিমের মা’ও
সুস্থ আছে আর-
দু’ফুট উচু এ ডিম দুটো
ভীষন ওজনদার।
একটি বারো কেজি হলেও
একটি কিছু কম-
তবে দুটোই পুষ্ট খুবই
ভাবনা নেই একদম।’
পত্রিকাতে এসব পড়ে
লোকজনেরা গল্প করে-
সবখানেতে গল্প এবং
চলছে মাতামাতি-
বলছে তারা-‘চিন্তা করো
কেমন রসিক হাতি!’
চিন্তা করেই যাই খেয়ে হিমশিম-
রসিক হাতি পাড়লো কী না ডিম
দুই.বিশেষ বুলেটিন
টেলিভীষন করছে প্রচার
বিশেষ বুলেটিন-
এই হাতিটা কোথা থেকে
এসেছে কোনদিন?
চিড়িয়াখানায় কবে থেকে
এই হাতিটার বাস?
উপস্থাপক বলছে হেসে
হাতির ইতিহাস।
ক্যামেরাতে ধরা হলো
সদ্য পাড়া ডিম-
যতবারই দেখে সবাই
যায় খেয়ে হিমশিম।
এক পাশেতে গাড়ীর ভেতর
বসানো হয় প্যানেল-
সরাসরি করবে প্রচার
জিওগ্রাফিক চ্যানেল।
দেশ বিদেশে চলে গেলো খবর-
চমকে গিয়ে থমকে গিয়ে
বললো সবাই-‘বলবো কী ভাই?’
ব্যাপারটাতো জবর।
তিন.হাতি-ঘোড়ার তর্ক
ঘোড়ার আগেই পাড়লো হাতি ডিম-
আহা হাতি!গোবেচারা,যায় খেয়ে হিমশিম।
বড়সড় ডিম পেড়েছে
হাতিটা এক জোড়া-
খবর শুনে দৌড়ে এলো
বিদ্রোহী এক ঘোড়া।
হাতিকে কয় ঘোড়া-
‘ভীষন বেলাজ তোরা।
একটুও নেই লাজ-শরমের বালাই-
এখন এ লাজ কোথায় রেখে
আমরা কোথায় পালাই?
বইয়ের ভেতর লেখা আছে
ঘোড়ার ডিমের কথা-
তুই কী না এক হাতি হয়ে
করলি বাতুলতা!!’
বললো তখন হাতি-
‘এই যে ঘোড়া, করবি যদি,
বেশী মাতামাতি-
মারবো তোকে লাথি।
ঘোড়া বলে-‘ছিঃ ছিঃ,
ডিম পেড়েছিস কেন মিছেমিছি ?
হাতি বলে ‘ঘোড়া-
করবো কী আর যদি ওরে
ডিম না পাড়িস তোরা?’
হাতি ঘেড়ার তর্কে-
কেউ কেউ যায় ভড়কে।
চার.লোক সমাগম
ডিম দেখেই হাসি আসে
নানা এবং নাতির-
তাদের অমন হাসি দেখে
গা গুলে যায় হাতির।
হাতির ডিমের জন্য-
এই চিড়িয়াখানা এখন
লোকে লোকারন্য।
ডিম পেড়েছে হাতি ওরে
ডিম পেড়েছে হাতি-
দেখতে এলো ছেলে-বুড়ো
কামার,কুমোর তাঁতি।
সকল শ্রেনীর সকল লোকে
দেখতে এলো ডিম-
দেখতে এলো টুকটুকি,জুই
দেখতে এলো মীম।
চিড়িয়াখানার কর্তারা সব
যায় খেয়ে হিমশিম।
পাঁচ.পশুর রানী হাতি
পুলিশ এবং সাংবাদিকের ভীড়ে-
যায় না চেনা আগের হাতিটিরে।
রীতিমতো হয়ে গেছে
টেলিভীষন ‘ইষ্টার’-
বনের থেকে হঠাৎ এলো
সেই হাতিটার ‘সিস্টার’।
বললো তাকে-
‘কেমন আছিস,ওরে?
দেখতে এলাম তোরে।’
বোনকে দেখে খুশী হলো হাতি-
আপ্যায়নে করলো মাতামাতি।
অনেক অনেক অনেক কথা বলে-
হাতির বোনে বনে গেলো চলে।
হাতি এখন ভালো খাবার পাচ্ছে,
পেটভরে সে নিজের খাবার খাচ্ছে।
এছাড়াও কান্ড কিছু
ঘটছে তেলেসমাতি-
আপাততঃ পশুর রানী
হয়ে গেছে হাতি।
ছয়.প্রতিক্রিয়া
হাতি এখন পৃথিবীতে
আলোচনার শীর্ষে-
পত্রিকাও দেয় কভারেজ
যেনো বিরাট বীর সে!
একটা ছেলে বীর হতে চায়,তাই
বললো-‘আমিও ডিম পাড়িতে চাই।’
আট বছরের ছেলের অমন
কথা শুনে মা-
হাঃ হাঃ করে হোঃ হোঃ করে
হেসেই বাচেন না।
কিন্তু,হাতির ডিম পাড়া তো
হাসির ব্যপার নয়-
এখনো তা বিজ্ঞানীদের
অজ্ঞাত বিষ্ময়।
সাত.মতবাদ
আনন্দেতে কিছু লোকের
পালিয়ে যায় ঘুম-
এমন আজব ব্যাপার ঘটায়
তাদের খুশীর ধুম।
তারা জানে এখন ঠিকই
সারা ধরাধাম-
অনায়াসে জেনে যাবে
বাংলাদেশের নাম।
জানবে সবাই এমন হাতি
বাংলাদেশে আছে-
ডিম পাড়া খুব সহজ ব্যাপার
যেই হাতিটার কাছে।
এই হাতিটা ডিম পাড়াতে
উঠলো আলোড়ন-
এটা হবে পর্যটকের
আজব আকর্ষন।
সকল সময় তাই-
উপকারী এই হাতিটার
সুস্থ থাকা চাই।
কিন্তু,কিছু লোকের কথা
একেবারে ভিন্ন-
বললো তারা-‘এটা হলো
কেয়ামতের চিহ্ন।
তাই-
এই ধরনের খারাপ হাতির বংশ-
করতে হবে ধ্বংস।’
দুই ধরনের মতবাদের
লোক হয়েছে ভাগ-
পরষ্পরের ওপর তাদের
‘সাপ-নেউলে’ রাগ।
বাক বিতন্ডা চলছে-
লোকজনেরা হাতি নিয়ে
নিজ মতামত বলছে।
আট.হাতির নামে মামলা
কিছু লোকে করছে মাতামাতি-
বলছে-‘দেখো,কত্তো বড়ো
হারামজাদা হাতি!
চিন্তা করেই যাই খেয়ে হিমশিম-
হারামজাদা পাড়লো কী না ডিম!’
সেসব লোকেই গর্জে ওঠে-‘আমরা-
তুলে নেবো এই হাতিটার চামড়া।
সাহস কতো বড়ো!
হাতি হয়ে ঘটায় কী না
কান্ড এমনতরো!’
এসব লোকে নেই হাতিটার প-ে
তারা হলো বিরোধী,বিপ।ে
আদালতে করে দিলো মামলা-
বললো তারা-‘এবার ঠ্যালা সামলা।
বুঝবি এবার ডিম্ব পাড়ার স্বাদ-
জীবনটা তোর বানাবো বরবাদ।’
ওসব লোকেই গর্জে ওঠে আবার-
স্লোগান দেয়-‘বন্ধ করো খাবার।
এই হাতিকে উপাস দিয়ে মারো-
নইলে কেউ ছাড়বো না তো
চিড়িয়াখানার কারো।’
স্লোগান দেয় আবার-
বন্ধ করো ‘ছাগলাহাতি’র খাবার।’
এই স্লোগান শুনতে পেয়ে
হাতিটা খুব কাঁদতে থাকে-
কষ্টগুলো বুকেতে তার
যেনো দানা বাঁধতে থাকে।
কেঁদেকেটে চিড়িয়াখানায়-
একটা দুটো পদ্মা বানায়
ছিচকাঁদুনে হাতি-
তাকায় আতিপাতি।
নয়.মামলার রায়
আজ দুপুরে দেয়া হবে রায়-
হাতিটাকে দেখাচ্ছে তাই
ভীষণ অসহায়।
এই ব্যাপারে অনেকেরই
আছে আকর্ষন-
তাই এ রায় নিয়ে তাদের
প্রচন্ড টেনশন।
আদালতে হাজার হাজার
সাংবাদিকের ভীড়-
হাতির মুখে টেলিভীষন
ক্যামেরা স্থীর।
জরূরী কাজ ফেলে সবাই
বসে টিভির কাছে-
দেশের মানুষ দ্বিধা নিয়ে
অস্থিরতায় আছে।
অবশেষে বিচারপতি
যখনই রায় দিলেন-
খুশি হলো তারা ভীষন
যারা দ্বিধায় ছিলেন।
হুর রে হুয়া হুর রে হুয়া
মামলা জিতে গেলো-
পশুর রানী হাতি বুঝি
নতুন জীবন পেলো।
দশ.পরিশিষ্ট
হাতি জেতায় রেগে গেলো
মামলাকারীর দল-
তারা এবার অন্যরকম
খাটালো কৌশল।
খুব গোপনে চিড়িয়াখানায়
কর্মচারীর বেশে-
মামলাকারীর দল থেকে এক
নিষ্ঠুর লোক এসে-
হাতির খাবারেতে সেদিন
মিশিয়ে দিলো বিষ,
খাবার খেয়ে করুনভাবে
মরলো হাতি,ইস!
(শেষ সময়ে হাতির দ’ুচোখ
ছিলো ছলোছলো।)
ডিম দুটোও ভেঙে চুড়ে
নষ্ট করা হলো।
মৃত্যু হওয়ার সাথে সাথে
এই পৃথিবীর মিডিয়াতে-
হাতি আবার হলো শিরোনাম-
চমকে গিয়ে থমকে গিয়ে
এমন আজব পরিণতি
দেখলো ধরাদাম।
কেউ কেউ দেখে শুনে
বললো-‘ভালোই হলো।’
কারো আবার কষ্টেতে খুব
চু টলোমলো।
সারাদেশে আরেক দফা
পড়েছে হইচই-
সকল শ্রেনীর লোকের মুখে
ফুটছে কথার খই।
শেষ অবধি ফল হয়েছে
এমন মাতামাতির-
গিনেস বুকে নাম উঠেছে
ডিম পাড়া এই হাতির।
Back To Top